Ads

এক কিংবদন্তির নিন্দিত বিদায়

২০০৮ সালে প্রথমবার বাফুফে সভাপতির হট সিটে কাজী সালাউদ্দিন বসেছিলেন। তারপর পানি গড়িয়েছে অনেক। একের পর এক বৈতরণি পেরিয়ে টানা ১৬ বছর রাজত্ব করে গেছেন। এবারও অনেক ইচ্ছা ছিল পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন করার। ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলতে হয়েছে। শনিবারই সালাউদ্দিনের শেষ কর্ম দিবস। এরপর থেকে অতীত হয়ে যাচ্ছেন দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার।

দুই দিন আগে কর্মীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়েছেন সালাউদ্দিন। অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে যান। অনেকেই ছবি তুলে তা স্মৃতিতে রেখে দেন। আজ তো নির্বাচনের আগে ব্যস্ত সময় কাটছেসবার।ফিফা-এএফসি থেকে পর্যবেক্ষক এসেছেন। তাদের সময় দিতে হচ্ছে সালাউদ্দিনকে। সেই ফাঁকে তাকে ফোনে ধরা হয়েছিল। ১৬ বছর পর বাফুফে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। একটুও কি খারাপ লাগছে না? বাংলা ট্রিবিউনের এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন একটু চুপ থেকে শুধু বললেন, ‘আমি এখন কথা বলতে পারছি না। এএফসির ডেলিগেটরা এসেছেন। তাদের নিয়ে মিটিং করতে হচ্ছে। পরে কথা বলবো।

বিদায়লগ্নে বাফুফে স্টাফদের সঙ্গে সালাউদ্দিন (ছবি: সংগৃহীত)

হয়তো খারাপ লাগলেও তা এখন বলতে চাইছেন না। নিজের খারাপ লাগাটুকু নিজের মধ্যে রাখতে চাইছেন। খুব করে যে চেয়েছিলেন আরও এক মেয়াদে থাকতে। তা হলো কই! আসলে দেশের ক্রীড়ামোদীদের অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে সালাউদ্দিনকে যেতে হচ্ছে একরাশ গ্লানি নিয়ে। ক্যারিয়ারে একজন সফল খেলোয়াড় কিংবা কোচ থাকলেও সংগঠক হিসেবে ব্যর্থতায় পূর্ণ ঝুলি নিয়ে মতিঝিলের বাফুফে ভবন ছাড়তে যাচ্ছেন।

ফুটবল ফেডারেশনে গ্রেট ফুটবলার থাকবেন। শুনতে ও দেখতে ভালো লাগে। তবে গ্রেটের তকমা লাগিয়ে যদি সেই প্রত্যাশা পূরণ না করতে পারেন, তাহলে তা শুধু দৃষ্টিকটুই না চরম হতাশারও। সালাউদ্দিনের বেলাতে হয়েছেও তাই। অনেক আশা ও স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের ফুটবলকে তলানিতে নিয়ে যাওয়ার পেছনে তার অবদান কম নয়। প্রথম মেয়াদে অনেক ইতিবাচক কিছু করে দেখালেও আস্তে আস্তে যেন রং ফিকে হতে থাকে।

সবশেষ মেয়াদে বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে ফিফা নিষিদ্ধ করেছে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। সালাম মুর্শেদীর জরিমানা হয়েছে। জাতীয় দলের র‌্যাঙ্কিং ১৮৫ তে। এতেই চিত্র পুরো পরিষ্কার দেশের ফুটবল কোথায় আছে, কোথায় রেখে যাচ্ছেন সালাউদ্দিন? সব গ্রেট খেলোয়াড় সবসময় ভালো সংগঠক হয় না, তা তার দিকে তাকালে পরিষ্কার।

তার অনেক কিছু করার সুযোগ থাকলেও সেভাবে কিছু করেননি। একটি উদাহরণই বলে দেবে সব। তখনকার সরকার প্রধানের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও ফুটবলের জন্য সেভাবে কিছু করে দেখানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন। বরং অন্য কাজে বেশ মনোযোগ দিয়ে গেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় ‘মুফতে’ পাওয়া সিলেট বিকেএসপিতে একাডেমির জন্য সাড়ে সাত লাখ ডলারের ফিফা থেকে পেয়েও তা কোথায় খরচ করেছেন, তা কে বলবে। সেই একাডেমিও তৎক্ষণাৎ বন্ধ হতে সময় লাগেনি।


খেলোয়াড়ি ক্যারিযারের দিনগুলোতে সালাউদ্দিন

এমন করে নানান সময়ে অনেক কিছু করার থাকলেও তা ফুটবলের জন্য করা যায়নি। বরং ফুটবলে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডই বেশি হতো। তা নিয়ে আলোচনা হতো। দেশের ফুটবলে সভাপতির চেয়ারে বেশি সময় ধরে ছিলেন সালাউদ্দিন। তার চেয়ে বেশি সময় আর কেউ থাকতে পারেননি। এটা একটা রেকর্ড বলতে হবে।

বিদায় বেলাতে নিশ্চয়ই কংগ্রেস ও ভোটের দিন শনিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে একটু হলেও আবেগতাড়িত হলেও হতে পারেন সালাউদ্দিন। কেননা ফুটবল নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকাটা যে তার মজ্জার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। কালকের পর থেকে আর তা নিয়ে ভাবতে হবে না। নতুন করে অন্য কাজে সময় কাটানোর চিন্তা করতে হবে।

যদিও সাফের সভাপতি থাকবেন সালাউদ্দিন আরও দুই বছর। তবে সেটা অনেকটাই আলংকারিক পোস্ট (মানে গৎবাঁধা কাজ)। বাফুফে তথা বাংলাদেশের ফুটবলের কর্ণধার থাকতে পারছেন না। দোতলায় উঠে সর্বডানের বৃহদাকার রুমে তার উপস্থিতি আর দেখা যাবে না। গাড়ি ঘুরিয়ে নিত্যকার ফুটবল ভবনে আসাটার অভ্যাসটাও পরিবর্তন করতে হবে। হয়তো সাময়িক কষ্ট হবে। তবে তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী?

একজন কিংবদন্তি ফুটবলারের সংগঠক হয়ে নিন্দিত বিদায়। নিশ্চয় যারা তার খেলা দেখেছেন, তাদের কাছে এটা বেশ পীড়াদায়ক। তবে সত্যটা মানতে হচ্ছে। ফুটবলমোদীরা নিশ্চয়ই তাকে ভুলে যাবেন না। তার ইতিবাচক-নেতিবাচক কর্মকাণ্ডই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। যিনি হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার মতো স্বপ্ন দেখিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে গদি ছাড়তে যাচ্ছেন।

নন্দিত থেকে নিন্দিত!

No comments

Powered by Blogger.